খুমের রাজ্য বান্দরবনে!

নাফাখুম আমিয়াখুম সহ আরো অনেক খুম সাথে অনেক ঝিরি ও পাহাড়, পাহাড়ি নদী, দূর্গম অরন্যে বিচ্ছিন্ন আদিবাসী জনপদ। এই আকর্ষণ অনির্বচনীয় এর বর্ননা অসম্ভব। সৌন্দর্যমন্ডিত বান্দরবান এর এক অপরুপ অংশ এই অঞ্চল। অনেকেই ভাবেন যেতে চান হয়ত হয়ে ওঠেনা বিভিন্ন কারনে আর যারা গিয়েছেন তারা তো জানেনই।

খুমের রাজ্য বান্দরবনে! 1
1: পথে পথে পাহাড়ি নদীর আকর্ষন

ঢাকা বা দেশের যে কোন স্থান হতে সারাসরি বান্দরবান সেখান থেকে থানচি যেতে হবে বাস, চাদের গাড়ি বা সিএনজিতে প্রায় ২ ঘন্টার মত সময় লাগবে তাতে। যেতে যেতে পথে নীলগিরি বা অন্যান্য পাহাড়ের নীল সবুজ আভায় মন ভরে যাবেই। থানচি পৌছে এন্ট্রি করে তারপর নৌকায় চলে যেতে পারেন পদ্মঝিরি সেখান থেকেই ট্রেকিং করে হেটে যেতে পারেন এক আদিবাসী পাড়ায় যার নাম থুইসা পাড়া। আসলে থুইসা পাড়া অনেকটা নোংগর স্থানের মত কারন এখান থেকে সহজভাবে আমিয়াখুম ও নাফাখুম যাওয়া যায়। এই পথ কেবল মাত্র তাদের জন্য যারা আসলেই শক্তসমর্থ যথেষ্ট আত্নবিশ্বাসী নিজের উপর এবং হাটার ভাল অভিজ্ঞতা আছে। থুইসা পাড়া যেতে পথে চোখে পড়বে পাথুরে পথ, কোথাও হাটু পানি থেকে কোথাও তলিয়ে যাবার মত পানি, ছোট ছোট অনেক ঝর্না, স্যাতসেতে পিচ্ছিল ভেজা পাথর, অবারিত সবুজ, গুহার মত স্থান, আদিবাসী পাড়া, বড় বড় কয়েকটি পাহাড় এবং অনেক টিলা; আর এসবই আপনাকে পাড়ি দিয়ে যেতে হবে। যতটা কঠিন ভাবছেন অতটা কঠিন নয় এবং যত সহজ ভাবছেন মোটেই অত সহজও নয়। মোটামুটি ভাবে হাটলে ৭-৮ ঘন্টায় পৌছে যাবেন। তবে যাতে রাত না হয় সেটা খেয়াল রাখবেন কারন পাথুরে রাস্তায় অন্ধকারে হাটা কোন মতেই কাম্য নয়। অনেক এমন যায়গা পাড়ি দিতে হবে যেখানে সামান্য পা পিছলে যাওয়া বা একটু ভুল আপনার জীবনের মূল্য দিয়েও শোধ করা লাগতে পারে, তাই সাবধান।

থুইসা পাড়া ছাড়াও আরো কয়েকটা পাড়া পাবেন যেখানেও থাকা যায়। থুইসা পাড়াতে একটা দোকান আছে যেখানে চা বিস্কুট কলা রুটি সহ আরো অনেক কিছু পাওয়া যায়। রাতটা ওখানে নিসন্দেহে ভাল কাটবে, সুন্দর যায়গা সাথে হাটার পরিশ্রম সব মিলিয়ে। খাবার গড়ে বেলা প্রতি ১৫০ টাকার মত পড়বে আর থাকার খরচ ও তেমন বেশীনা।

খুমের রাজ্য বান্দরবনে! 2
2: খুমের রাজ্যে অপূর্ব সব চলার পথ

থুইসা পাড়া হতে আমিয়াখুমের রাস্তা ৪৫ মিনিটের মত আর দেবতার পাহাড় পাড়ি দিতে সর্বোচ্চ এক ঘন্টার মত লাগবে। দেবতার পাহাড় এর পরই সেই আমিয়াখুম, এর আশেপাশেই আপনি পাবেন ভেলাখুম এবং সাতভাইখুম। যদিও বর্যাকালে আমিয়াখুমের পাশের যায়গা গুলিতে যাওয়া কঠিন। এই বর্যায় ভরা যৌবনা আমিয়াখুম। দেবতার পাহাড় বেশ খাড়া তাই সাবধানতার সাথে চড়তে হবে এবং নামতে হবে।

খুমের রাজ্য বান্দরবনে! 3
3: মহিমান্বিত আমিয়াখুম

থুইসা পাড়া হতে নাফাখুম হেটে প্রায় ৩ ঘন্টার পথ। এই পথে বেশ কয়েকবার খরস্রোতা ঝিরি পথ অতিক্রম করতে হবে যেটি বেশ কঠিন। উপরে থেকে আপনি স্রোতের তীব্রতা বুঝতে পারবেন না। পানি যদি হাটুর উপরে উঠে যায় তাহলে যে কোন সময় স্রোতে আপন ভেসে যাবেন আর একবার ভেসে গেলে সেটিও জীবন মরন সমস্যা কারন প্রচুর বড় বড় পাথর আছে যার সাথে ধাক্কা মানে নির্ঘাত মৃত্যু। সেজন্য দড়ি বেধে তা ধরে নতুবা সবাই সবার হাত ধরে মানব শৃঙ্খল তৈরী করে যাওয়ার চেস্টা ই ফলদায়ক। তবুও সাবধান থাকা অনিবার্য কারন কোথাও কোথাও জল এত বেশী যে আপনি নাগাল পাবেন না। এছাড়াও নদীর পাশ দিয়ে যেতে যেতে পাথুরে রাস্তায় ও আপনি সমস্যায় পড়তে পারেন। সবসময়ই খেয়াল করে পা দিতে হবে কারন পা ঠিক মত না দিলে যেকোন সময় সরে যেতে পারে ফলে আপনি পড়ে যেতে পারেন বা পা মচকে যেতে পারে। এভাবে হেটে এসে নাফাখুম ঝর্নার পাশেই নাফাখুম পাড়া চাইলে ওখানে থাকতে পারেন। আমিয়াখুম হয়ত বেশি উচু কিন্তু নাফাখুম আকারে বেশি বড়। রাতে ঝর্নারা শব্দে কেমন ঘুম হয় তা দেখে নিতে পারেন। এখানেও একই রকমভাবে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা যায়।

খুমের রাজ্য বান্দরবনে! 4
4:বিখ্যাত নাফাখুম ফলস

নাফাখুম হতে দুই ঘন্টায় হেটে রেমাক্রি। এটুকু রাস্তা সবচেয়ে সহজ। সেখান থেকে নৌকায় রেমাক্রি ফলস এ পৌছে তা দেখে সাংগু নদী দিয়ে সরাসরি থানচি ফেরা। সেখান থেকে বান্দরবান এবং যার যার গন্তব্যে। যারা সহজে এবং কম কষ্ট করে এসব দেখতে চান তারা সরাসরি থানচি থেকে নৌকায় রেমাক্রি চলে যেতে পারেন এবং সেখান থেকে হেটে নাফাখুম সেখান থেকে থুইসা পাড়া এবং আমিয়াখুম। সব ঘুরে আবার একই রাস্তায় ব্যাক। সেক্ষেত্রে পদ্মঝিরি দেখা হবেনা।

গাইড স্থানীয়ভাবে ব্যাবস্থা করা যায়। আর একটা গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার হল ট্যুর এজেন্সি গুলা প্রথমে অনেক কিছু বললেও পরে তারা গাফেলতি করে। ট্যুরে যাবার জন্য নিজেদের লোকেদের সাথে যাওয়াই ভাল তাহলে সবার একটা দায়িত্ব থাকে। কেউ খামখেয়ালি করে ইচ্ছে মত যেদিক ইচ্ছা হেটে বা চলে যায়না। আর গ্রুপ নির্বাচনে একটু হিসাব করা উচিত কারন আসলেই এখানে অনেক পরিশ্রম আর সহ্যক্ষমতার ব্যাপার আছে, আমি নিশ্চিত সবাই এ চ্যালেঞ্জ নিতে পারবেনা।

খুমের রাজ্য বান্দরবনে! 5
5:রেমাক্রি ফলস

সত্য কথা হল এই ভরা বর্ষায় এই যায়গা যাওয়া যথেষ্ট সাহস কষ্ট পরিশ্রম আর বুদ্ধি র ব্যাপার। শীতকালে যথেষ্ট কম পরিশ্রমে এখানে যাওয়া যাবে তবে নাফাখুম আমিয়াখুম সাংগু নদী আর পাহাড়ি ঝিরি ও ঝর্নার এই কানায় কানায় পূর্ন রুপ তখন ম্লান। প্রাকৃতিক বিরুপতার মাঝে যে অনাবিল আদি সৌন্দর্য তা এখনই ভাল দেখা যায় আর তার জন্য এই পরিশ্রম আর সহনশীলতার মূল্য তো দিতে হবেই।

ভ্রমন হোক আনন্দময় ভ্রমন হোক ভালবাসার ভ্রমন হোক শিক্ষার ও অভিজ্ঞতার।

420cookie-checkখুমের রাজ্য বান্দরবনে!

This Post Has One Comment

  1. I feel that
    is one of the most vital information for me.

    And i am satisfied reading your article.

    However want to remark
    on some basic issues, The web
    site style is perfect, the
    articles is actually great : D.
    Good activity, cheers

Leave a Reply