
কি এই বাইক্কার বিল?
ঘুরতে ভালোবাসেন, বিস্তীর্ন অবারিত জলাভূমি টানে আপনাকে, পাখির কলকাকলি মুগ্ধ করে তোলে হৃদয়কে; বাইক্কার বিল খুব ভালো পছন্দ আপনার জন্য। প্রায় ১০০ হেক্টর আয়াতনের এই জলাভূমি মাছের ও পাখির জন্য একটি অভয়াশ্রম। বিভিন্ন রকমের দেশীয় মাছ পাওয়া যায় এখানে, সাথে পাখির কিচির-মিচির এ মেতে থাকে বিলের পরিবেশ।
কোথায় এই বিল?
চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল এর বিখ্যাত হাইল হাওড় এর পূর্ব পাশের একশ হেক্টর জলাভূমি ই এই বাইক্কার বিল। ঢাকা থেকে প্রায় ২০০ কিমি আর শ্রীমঙ্গল থেকে প্রায় ২০ কিমি দূরত্ব এই বিলের। তবে শ্রীমঙ্গল শহর ছেড়ে মৌলভীবাজারের দিকে যেতে ১০ কিমি এর মত পার হবার পরই দুপাশে পাওয়া যায় এই বিল।
কিভাবে যাওয়া যায়?
ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে বা ট্রেনে চেপে শ্রীমঙ্গল, আর সেখান থেকে সিএনজি অটো রিকসাতে সরাসরি বিলে। যদিও কিছুটা রাস্তা কাচা তবে শীতকালে যাওয়াতে সমস্যা হবেনা। যাওয়া আসা বাদে একদিন এই বিলের ঘুরে বেড়ানোর জন্য যথেষ্ট, যদি না খুব বেশী পাখি প্রেম হয়। বিলে ঘুরতে হবে নৌকায়, ঘাটেই পাওয়া যাবে। মোটামুটি সস্তায় জন প্রতি ৩০-৪০ টাকায় প্রতি ঘন্টা ঘোরা যাবে বিলে।

কোথায় থাকা যায়?
শ্রীমঙ্গলে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান আছে- চা বাগান, চা গবেষণা ইন্সটিটিউট, ভাড়াউড়া লেক, যজ্ঞকুণ্ড ঝর্না, রাজঘাট লেক, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ইত্যাদি, তাই অনেক পর্যটকই বেড়াতে আসেন এখানে। থাকার জন্য শ্রীমঙ্গল যথেষ্ট ভালো, বিলাসবহুল রিসোর্ট থেকে শুরু করে মোটামুটি সব ধরনের আবাসনই পাওয়া যায় এখানে। থাকা খাওয়া নিয়ে তেমন চিন্তার কিছু নেই।


দেখার কি আছে?
বিস্তীর্ন জলরাশিতে শাপলা শালুক সহ বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ প্রথমেই চোখ জুড়াবে, এখানে বিরল নীলপদ্মের দেখা মিলতে পারে। এই মাছের অভয়াশ্রমে বিভিন্ন প্রজাতির দেশী মাছ দেখা যায়, তার মধ্যে কিছু বিপন্ন প্রজাতিও রয়েছে। এখানকার মাছের মধ্যে- আইড়, মেনি, কই, ফলি, পাবদা, বোয়াল, রুই, গজারসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী এখানে প্রায় ৯৮ প্রজাতির মাছ আছে।


তবে বাইক্কার বিলের প্রধান আকর্ষণ এর পাখি। বিভিন্ন সূত্র এখানকার পাখির প্রজাতি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য প্রদান করে, সুনির্দিষ্ট করে বলা কঠিন হলেও এখানে ১৬০ থেকে ২০০ পর্যন্ত প্রজাতির পাখির আবাসন হতে পারে। দলে দলে বা বিছিন্ন ভাবে হাজারও পাখির সাথে দেখা হবে এখানে। পার্পল সোয়াম্প হেন বা কালেম, গ্রেট কর্মোরান্ট বা ছোট পানকৌড়ি, লিটল কর্মোরান্ট বা বড় পানকৌড়ি, ওরিয়েন্টাল ডার্টার বা সাপ পাখি, ডাহুক, জল মোরগ, দল পিপি দেখতে পারেন সহসাই। বিভিন্ন রকম বক যেমন- ধুসর বক কিংবা বেগুনি বক চোখে পড়বে শিকার রত অবস্থায়। বিপন্ন পাখি ব্ল্যাক হেডেড আইবিস বা কালোমাথা কাস্তেচরা দেখা যাবে এখানে। এছাড়াও আছে শঙ্খচিল, ভুবন চিল, পালাসী কুড়া ঈগল, গুটি ঈগল ইত্যাদি। শীতকালে পাখির আনাগোনা বেড়ে যায়। ঝাকে ঝাকে অতিথি পাখি উড়ে আসে এখানে এর সরালি, মরচেরং ভুঁতি হাঁস, গিরিয়া হাঁস, ল্যাঞ্জা হাঁসে, টিটি, কালাপাখা ঠেঙ্গী গেওয়ালা বাটান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তবে শীত চলে গেলে পাখির পরিমান কিছু কমে যায়, তাই নভেম্বর থেকে জানুয়ারী এই সময়কালই এই বিল দেখার জন্য সবচেয়ে আদর্শ।


পড়ন্ত বিকেলে নৌকায় বসে বিলে নয়নাভিরাম সুর্যাস্ত দেখা কিংবা সুর্যোদয়ে পদ্ম ও শাপলা পাতায় টলমল জলে সূর্যের আভা দুটোই মনকে বিমোহিত করবে। বিল থেকে পাশের জংগল ও বেশ আকর্ষনীয় লাগবে। নৌকায় চড়ে বিলে ঘুরে বেড়ানোর আলাদা মজা তো আছেই। এছাড়াও এখানে পাখি দেখার জন্য নির্মিত হয়েছে দেশের একমাত্র র্পযটন টাওয়ার, যা ৩তলা বিশিষ্ট। প্রত্যেক তলাতেই রয়েছে ১টি করে শক্তিশালী দূরবীক্ষণ যন্ত্র।


অল্প সময়ে প্রকৃতির খুব কাছাকাছি যেতে চাইলে বাইক্কার বিল খুবই অসাধারন পছন্দ। পাখি প্রেমীদের স্বর্গ এই বিলের বৈচিত্র বর্ননা করে বোঝানো সম্ভব না। ভিজ্যুয়াল স্টোরিজের পক্ষ হতে জোরদার সুপারিশকৃত ভ্রমন স্পট এটি, অবশ্যই ঘুরে আসুন।
পরিবেশ পরিষ্কার রাখুন, নিরাপদে ভ্রমন করুন এবং পরিবেশের অংশ হয়েই পরিবেশকে উপভোগ করুন।
Photo courtesy: Lonely Traveller, Travel and explore bd, Adar Bapari, United News of Bangladesh, Agrilinks, LRB Travel Team, Dhaka Tribune, Touhid Niaz, Faisal Akram and Tourist Signal